হিন্দুদের বাঁচাতে জঙ্গিদের গুলিতে মৃত সইদ, গর্বিত মৃতের বাবা

345 0

গত মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় মৃত ২৬ জন ভারতীয়। জঙ্গিদের গুলিতে যখন সবাই আতঙ্কিত তখন সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিল স্থানীয় যুবক সইদ আদিল হুসেন শাহ। তিনি পেশায় একজন টাট্টু ঘোড়া চালক। সেখানকার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বাকিদের বাঁচাতে এক জঙ্গির হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নিতে গিয়েছিলেন টাট্টু ঘোড়া চালক। কিন্তু সাহস দেখাতে যাওয়াই কাল হল দাঁড়াল সইদের। পরিণামে প্রাণ হারাতে হল তাঁকে। কিন্তু অনন্তনাগের বাসিন্দা সইদের মৃত্যুতে গর্বিত তাঁর বাবা।

সইদ আদিল হুসেন শাহ ছিলেন বাড়ির একমাত্র রোজগেরে। কিন্তু তাঁর আচমকা মৃত্যুতে মাথায় পাহাড় ভেঙ্গে পড়েছে তাঁর পরিবারে। সইদের বাবা হায়দার শাহ বলেন, ‘ওর জন্য গর্বিত আমি। সেটাই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে এখনও। নাহলে আমার জোয়ান ছেলের মৃতদেহ দেখে, ওর মুখ দেখে আমিও ওইখানেই মারা যেতাম হয়তো। ওর মতো বাহাদুর ছেলের জন্যই বোধহয় আমি বেঁচে আছি এখনও। ও যে নিজের প্রাণ দিয়েও কিছু মানুষকে বাঁচিয়েছে, এটা জেনেই আমার মাথা উঁচু হয়ে যাচ্ছে গর্বে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সন্ধ্যা ৬টার দিকে জানতে পারি যে আমার ছেলে এবং খুড়তুতো ভাই হাসপাতালে আছে। যারা সইদকে খুঁজতে গিয়েছিল তারা আমাকে ঘটনাটি সম্পর্কে জানিয়েছিল।’

সইদের মা বলেন, ‘সে প্রতিদিন ৩০০ টাকা আয় করত। আমরা সন্ধ্যায় চাল কিনে একসঙ্গে খেতাম। এখন কে খাবার আনবে? কে ওষুধ আনবে?’ তাঁর বোনের কথায়, ‘সেদিন দাদার তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসার কথা ছিল। সে বলেছিল শরীর ভালো নেই এবং একদিন ছুটি নেবে। কিন্তু সে আর ফিরে আসেনি। সে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে অন্যদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। তিনটে গুলি তার বুকে লাগে।’

জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ জানান, ‘সইদ সন্ত্রাসবাদীদের থামানোর চেষ্টা করেছিলেন এবং একজন সন্ত্রাসীর কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে নেওয়ারও চেষ্টা করেন, তাই তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়।’ কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের পরিবারটির দায়িত্ব নিতে হবে এবং তাদের সাহায্য করতে হবে। আমি তাদের এই আশ্বাস দিতে এসেছি যে সরকার এই কঠিন সময়ে তাদের পাশে আছে এবং আমরা তাদের জন্য যা করতে পারি, করব।’

প্রতিদিনের ন্যায় মঙ্গলবার ভোরেও সইদ টাট্টু ঘোড়াটিকে নিয়ে বৈসরন উপত্যকায় গিয়েছিলেন। কিন্তু আর ফেরা হল না বাড়িতে। ৩:৩০ মিনিট নাগাদ গুলি চলার আওয়াজ আর মানুষের চিৎকার ছড়িয়ে পড়ে উপত্যকার চারদিকে। মারা যাওয়ার আগে বাড়ির সঙ্গে শেষ কোনও কথা হয়নি সইদের। তাঁকে বারবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। ৪:৩০ মিনিট নাগাদ যখন তাঁর ফোনে রিং হতে থাকে, পরিবার ভেবেছিল তাহলে বোধ হয় সইদ নীচে নামছে উপত্যকা থেকে। কিন্তু হামলার খবর পাওয়ার পরেই তাঁর পরিবার থানায় এবং পরে হাসপাতালে ছুটে যায়। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। সে ছুটে গিয়ে কেড়ে নিতে চান জঙ্গির হাতের বন্দুক। তখনই হয় হাতাহাতি। আর তার জেরে বুলেটের আঘাতে প্রাণ হারান তিনি।

Related Post

নর্দমায় ভ্রূণ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য এলাকায়

Posted by - January 19, 2025 0
মোদী রাজ্যে উদ্ধার সদ্যোজাতের অপরিণত, অসাড় মৃতদেহ। আবর্জনার স্তূপের উপর শকুনের আনাগোনা দেখে এলাকায় ভিড় জমে। এলাকায় ভিড় জমলেই নজরে…

অতিক্রান্ত ২৪ ঘন্টা, এখনোও তেলেঙ্গানার সুড়ঙ্গে আটকে ৮ শ্রমিক

Posted by - February 23, 2025 0
২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো তেলেঙ্গানায় ভেঙে পড়া সুড়ঙ্গে আটকে আট শ্রমিক। ওই আট শ্রমিক সুড়ঙ্গের সাড়ে ১৩ কিলোমিটার ভিতরে…

‘ইয়াদ আ রাহা হ্যায়’-এর ছন্দে বাপি লাহিড়িকে শ্রদ্ধার্ঘ্য গণেশ আচার্যর

Posted by - February 17, 2022 0
মুম্বই: বাপি লাহিড়ির গলায় ‘ইয়াদ আ রাহা হ্যায় তেরা পেয়ার’ গানটি শুনে সুরে ভাসেননি এমন মানুষ মেলা দুষ্কর। সেই গানের সুরেই…

শরীর ও মুখে অ্যাসিড ঢেলে নির্মম অত্যাচার যুবতীকে

Posted by - January 30, 2025 0
নির্মম ঘটনা ডবল ইঞ্জিনের সরকারের রাজ্যে। এক প্রতিবেশীর লালসার শিকার হলেন এক যুবতী। জানা গিয়েছে, গুয়াহাটিতে বাড়িতে ঢুকে দুই সন্তানের…

বুস্টার ডোজের জন্য ব্যবহৃত দুই টিকার দাম কমানোর বড়োসড়ো ঘোষণা করল দুই সংস্থা

Posted by - April 9, 2022 0
নয়াদিল্লি: শুক্রবার স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, ১৮ বছরের বেশি বয়স হলেই আগামী ১০ এপ্রিল থেকে বুস্টার টিকা নিতে পারবেন। তবে…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *